স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ইউএনও’র মহানুভবতায় ত্রাণ পেলো দুই ভারসাম্যহীন নারী। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে উপজেলার জিরো পয়েন্টে চট্টগ্রামমুখী মহাসড়কের যাত্রী ছাউনিতে। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে একটি যাত্রী ছাউনীর নিচে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে যাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মধ্য বয়সের দুই নারী। লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও রাস্তায় মানুষ চলাচল কম থাকায় সাহায্য ও সহানুভূতি না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে করোনা টিকা দিয়ে আসার পথে চৌদ্দগ্রামে কর্মরত একদল সংবাদকর্মীর ক্যামেরা বন্দি হয় ভারসাম্যহীন দুই নারী। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আপন মনে কথা বলছেন মধ্য বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এই দুই নারী। নাম জানতে চাইলে বলেন-একজন ময়না বেগম, অপরজন সাবিনা আক্তার।
ময়না বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর নাম আবদুল করিম। লইছ (রইছ) মিয়া নামে তার এক ছেলে আছে। গ্রামের বাড়ি কখনো বলে যশোর আবার কখনো বলে বরিশাল। উভয়ে যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তবে সাবিনা আক্তারকে ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা গেছে। তারা জানায়-সম্পর্কে দু’জন বোন। সাবিনা আক্তারের কথায় বুঝা যাচ্ছে-এরা শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।
ময়না বেগমের সাথে কথা বললে জানান, তার বড় ভাই শাহজাহান একজন পুলিশ সদস্য। এই শাহাজাহান আমাদের সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। লক্ষ্য করে দেখা যায়, যাত্রী ছাউনীর নিচে পলিথিন দিয়ে ঘেরা একটি ঝুপড়ি ঘরের চুলায় অপরিস্কার পাত্রে কচুর শাক সিদ্ধ করছে। এগুলো কি রান্না করছেন-জানতে চাইলে সাবিনা আক্তার বলেন, ভাত অনেক দিন খাইনা চাউল নেই তাই কচুর ভর্তা করছি। এ দিয়ে পেট ভরে খাবো এবং তোমরা খেয়ে যেও।
যাত্রী ছাউনীর পাশেই ছোট হোটেল দোকানদার আবদুল মজিদ জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন এই দুই নারী দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করে আসছে। আমি লকডাউনের আগে কিছু খাবার দিতাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় খাবার দিতে পারছি না। মাঝে মধ্যে ওরা আমাদেরকে বিরক্ত করে।
আনোয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক জানান, আমি এদের পাশেই একটি ঘরে থাকি। অনেকদিন যাবৎ দুই নারীকে এখানে বসবাস করতে দেখি। মাঝেমধ্যে সাবিনা আক্তার নামের ওই নারী একা একা ইংরেজীতে কথা বলে। এতে করে বুঝা যাচ্ছে-তারা শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।
ভারসাম্যহীন এই দুই নারীর বিষয়ে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক কথা বলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হকের সাথে। তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রাথমিকভাবে অভুক্ত দুই নারীর বিষয়ে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে নিজের গাড়ি থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণের একটি প্যাকেট তাদের হাতে তুলে দেন। সরকারি ত্রাণ পেয়ে দু’জনই খুশি হয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানান।